মেধাবী মুখ
শূন্য থেকে শীর্ষে
তরুণ ভাস্কর্য
শিল্পী
মাহমুদুল হাসান
হিমেল
হোসেন
| দৈনিক প্রথম আলো, তারিখ: ০৭-০৪-২০১৩
এরপর
উপজেলা, জেলা, বিভাগে যেখানেই
ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা, সেখানেই
মাহমুদের অংশগ্রহণ এবং সেরা পুরস্কার
নিয়ে ফিরে আসা।
এসএসসির পাট চুকিয়ে কলেজে
উঠেই মাহমুদ দারুণ সাহসী
এক কাজ করলেন—দুর্গাপুর
মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক একক চিত্র প্রদর্শনীর
আয়োজন করলেন। বই
পড়ে আর বাবার মুখে
মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা শুনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়
আঁকা তাঁর ৫০টি ছবি
নিয়ে এই প্রদর্শনী।
খুদে চিত্রশিল্পী হিসেবে চারদিকে পরিচিত
হয়ে ওঠেন মাহমুদ।
সবার উৎসাহ আর বাহবা। তার
পর থেকেই মাহমুদ স্বপ্ন
দেখতে শুরু করেন বড়
শিল্পী হওয়ার। এইচএসসি
পাস করে চলে আসেন
ঢাকায়। ভর্তিযুদ্ধের
লড়াইয়ে অবশেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
চারুকলা অনুষদের ভাস্কর্য বিভাগে সুযোগ হলো। ভাস্কর
হবেন, এমন ভাবনা ছিল
না। দেশবরেণ্য
ভাস্কর আবদুর রাজ্জাক, শামীম
শিকদার প্রমুখের সংস্পর্শে এসে নতুন উদ্যমে
কাজ শুরু করলেন।
কাঠ, মাটি, লোহা বা
ফেলে রাখা যেকোনো জিনিসকেও
যে অপূর্ব অবয়ব দিয়ে
সবাইকে চমকে দেওয়া যায়,
ভাস্কর্যে না পড়লে তা
জানাই হতো না।
চারুকলার প্রথম সাফল্য এল
২০০০ সালে—বার্ষিক প্রদর্শনীতে
সেরা ভাস্কর্যের পুরস্কার। তারপর
২০০২ সালে পেলেন শিল্পকলা
একাডেমী আয়োজিত ১৪তম নবীন শিল্পীদের শিল্পকর্ম
প্রদর্শনীর সেরা ভাস্কর্য পুরস্কার। ২০০৫
সালে পেলেন শিল্পকলা একাডেমী
আয়োজিত ১৬তম জাতীয় শিল্পকর্ম
প্রদর্শনীর সেরা ভাস্কর্য পুরস্কার। তার
দুই বছর পর ২০০৯
সালে শিল্পকলা একাডেমী আয়োজিত ১৮তম জাতীয়
শিল্পকর্ম প্রদর্শনীতে গ্র্যান্ড প্রাইজ পেয়ে নবীন
শিল্পীদের মধ্যে হইচই ফেলে
দেন সোহাগ।
বাইরে এত কাজ আর
পুরস্কার পেতে গিয়ে ক্লাসের
পড়ায় মোটেও ছাড় দেননি
মাহমুদ। সম্মান
পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম
(২০০৬) মাস্টার্স পরীক্ষায়ও সর্বোচ্চ ফল প্রথম শ্রেণীতে
প্রথম (২০০৯) হয়েছেন।
সর্বশেষ
জাতীয় জাদুঘরের ১০০ বছর পূর্তি
উৎসব উপলক্ষে আয়োজিত শিল্পকর্ম প্রদর্শনী
২০১৩ ভাস্কর্যে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার পান মাহমুদ।
জাতীয় জাদঘুরে এ প্রদর্শনী ১০
এপ্রিল ২০১৩ পর্যন্ত চলবে। কাজে
এত সাফল্য কীভাবে এল?
প্রশ্ন করতেই হাস্যমুখে মাহমুদ
বলেন, ‘আমার কাজের বৈশিষ্ট্য
হলো একাগ্রতা, আমি যখন কোনো
থিম নিয়ে কাজ করি,
তাতে শতভাগ মন নিবিষ্ট
করি, কাজে নতুনত্ব আনতে
সর্বোচ্চ চেষ্টা করি।’
নিজস্ব স্টুডিওতে এখন নিজেই কাজ
করে চলেছেন মাহমুদ।
মেধাবী এই তরুণ ভাস্কর্য
স্বপ্ন দেখেন আন্তর্জাতিক মানের
আদর্শ ভাস্কর হওয়ার।
=======================================================
দৈনিক সংবাদ
ঢাকা মঙ্গলবার, ২৭ শ্রাবণ ১৪১৬, ১৯ শাবান ১৪৩০, ১১ আগস্ট ২০০৯
মাহমুদুল হাসান
মাহমুদুল হাসান
ভাস্কর্য শিল্পের তরুণ প্রতিভা
শিল্পকলার অন্যান্য শাখার মতো ভাস্কর্য শিল্পও এদেশে এগিয়েছে। হামিদুজ্জামান খান, নিতুন কুন্ডু, হামিদুর রহমান, নভেরা আহমেদের মতো শিল্পীদের হাত ধরে যার বিকাশ ঘটেছিল তা এখন ঋদ্ধ এক মাধ্যম হিসেবে দাঁড়িয়েছে। তরুণরাও এই মাধ্যমে নিজস্ব ভাবনার স্বাক্ষর রাখছেন। মাহমুদুল হাসান ওরফে সোহাগ যার উজ্জ্বলতম প্রতিভা।
লিখেছেন মোস্তাক আহমেদ
জীবনের জাদুশিল্পী' মাহমুদুল হাসান। তিনি রঙ-তুলি বা পেন্সিল দিয়ে নয়, ছবি আকেন নেট, পাইপ, বালি, কাগজ দিয়ে। মাহমুদুল হাসানের সৃষ্টি 'ম্যাজিক অফ লাইফ'! ভাস্কর্যটি ২০০৫ সালে শিল্পকলা একাডেমীর ষোড়শ জাতীয় প্রদর্শনীতে সেরা তরুণ শিল্পীর পুরস্কার লাভ করে। পৃথিবীতে মানুষের ক্ষণস্থায়িত্বকে বোঝাতে চেয়েছেন ম্যাজিক অফ লাইফ-এর মাধ্যমে। তিনি মানুষের ক্ষণস্থায়িত্বকে বোঝাতে ব্যবহার করেন সুতার ওপর ঝুলন্ত ক্ষুদে মানুষ। ছোটবেলায় ছবি আঁকায় হাতেখড়ি হয় বাবার মাধ্যমে। বাবার প্রেরণাতেই বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন তিনি। জিতে নেন নানা পুরস্কারও। গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর থানার তেরিবাজার গ্রামে। স্কুল শিক্ষয়িত্রী মা উম্মে কুলসুম ও সাংবাদিক বাবা মোহন মিয়ার আত্মজ সোহাগ সুসং আদর্শ বিদ্যানিকেতন থেকে প্রথমিক এবং এম.কে.সি.এম স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। এখন চারুকলা ইনস্টিটিউটে ভাস্কর্য বিষয়ে পড়াশোনা করছেন। ছোটবেলায় সোহাগ বাবা মোহাম্মদ মোহন মিয়ার মুখে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও ঘটনা শুনে এমন সুন্দর ছবি আকেঁন, যা এলাকায় বেশ সাড়া ফেলে এবং ব্যাপক প্রশংসিত হয়। আর তখন থেকেই সোহাগ স্বপ্ন দেখতে শুরু করে বড় হয়ে শিল্পী হওয়ার। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান বলে ঢাকায় রেখে পড়াশোনার খরচ চালানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। বাবার এই কষ্ট বুঝতে পেরে সোহাগ নিজেই বিকল্প আয়ের উৎস খুঁজে নেন। ২০০০ সালে লোহার চিকন তারের নেট দিয়ে বিভিন্ন প্যাটার্নের ভাস্কর্য ডাইস বানিয়ে অর্জন করেন চারুকলা ইনস্টিটিউট ভাস্কর্য বেস্ট এওয়ার্ড। ২০০২ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী আয়োজিত চতুর্দশ নবীন চারুকলা প্রদর্শনীতে দুটি ভাস্কর্য নিয়ে অংশগ্রহণ করে অর্জন করে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী আয়োজিত ১৮তম জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনীতে 'লক্ষ্য-২' ভাস্কর্যের জন্য 'গ্রান্ড প্রাইজ' বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী জাতীয় পুরস্কার ২০০৯ পেয়েছেন মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান। এ প্রসঙ্গে শিল্পী মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান বলেন, আমার শিল্পকর্মগুলোর নাম দিয়েছি 'লক্ষ্য'। আর এই শিল্পকর্মের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি বর্তমানের গতানুগতিক মাধ্যমগুলো থেকে ভিন্ন। আমি আসলে শিল্পকর্মের মাধ্যমে গতানুগতিকতার বাইরে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌছার চেষ্টা করেছি এবং কতটা সফল হয়েছি তা সময়ই বলে দেবে। আমার শিল্পকর্মে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেছি_সাইকেল রিং, চিকন তারের জাল, আয়রন রড, আয়না, পেপার, বার্লি ও লোহার সুক্ষ্ম কাঁটা। আমি আমার নিজস্ব আঙ্গিকে কাজ করে এগিয়ে যেতে চাই। সোহাগ পুরস্কার প্রাপ্তির পর তার অভিব্যক্তিতে বলেন, আজকের এই সফলতা আমার দায়িত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে। আমি চাই সবসময় নিজস্ব আঙ্গিকে কাজ করতে। দেশ, সমাজ তথা সারাবিশ্বকে সময়োপযোগী বিষয়ভিত্তিক শিল্পকর্ম উপহার দিতে চাই। জীবনে যা কিছু সুন্দর তা তুলে ধরে অসুন্দরের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে চাই। এবারের পুরস্কৃত শিল্পকর্মের মাধ্যমে আমি আমার নিজের রূপ তথা মানুষের জীবনযুদ্ধের রূপকে নান্দনিকভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছি।